ওয়েসিস স্কলারশিপ হল পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত SC, ST ও OBC বিভাগে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা আছে তাদের জন্য জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ , এই স্কলারশিপ টি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তর এবং আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তর দ্বারা পরিচালিত এই স্কলারশিপ এর মাধ্যমে প্রিম্যাট্রিক এবং পোস্ট ম্যাট্রিক উভয় ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ওয়েসিস স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র প্রয়োজন যোগ্যতা কত টাকা স্কলারশিপ দেওয়া হয় কিভাবে আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করবেন রিনিউয়াল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পুরো পদ্ধতি আজকেরে আমাদের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। ওয়েসিস স্কলারশিপ কি
ওয়েসিস স্কলারশিপ এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে সমস্ত আর্থিক দিক থেকে দুর্বল এসসি এসটি এবং ওবিসি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী আছেন তাদের জন্য একটি স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করেছেন , এই স্কলারশিপ এ অর্থের পরিমাণ বিভিন্ন শ্রেণি ভিত্তিক আলাদা আলাদা রয়েছে অর্থাৎ আপনি যদি উঁচু শিক্ষায় এখন পড়ছেন তাহলে আপনি সহায়তা বেশি পাবেন এছাড়াও যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন তাদের অধিক স্কলারশিপের অধিক প্রদান করা হয়ে থাকে।
ওয়েসিস স্কলারশিপ কারা পাবে ও যোগ্যতা
ওয়েসিস স্কলারশিপে আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষার্থীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এছাড়াও কিছু যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সেগুলো নিম্নে দেওয়া হল।
SC শিক্ষার্থীদের প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে
* আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে অবশ্যই নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হতে হবে ।
• এসসি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
• পরিবারের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।
ST শিক্ষার্থীদের প্রিম্যাট্রিক্স স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে
• নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হতে হবে
• আবেদনকারীকে অবশ্যই ST বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে
• পরিবারের বার্ষিক আয় দু লক্ষ টাকার বেশি হওয়া যাবে না
SC/ST শিক্ষার্থীদের পোস্ট ম্যাট্রিক্স স্কলারশিপের ক্ষেত্রে
• শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিকের পরবর্তী স্তরে পড়াশোনা করতে হবে।
• আবেদনকারী শিক্ষার্থী SC বা ST শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
• পরিবারের বার্ষিক আয় 2.5 লক্ষ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় ।
OBC শিক্ষার্থীদের জন্য পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে
• শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মাধ্যমিকের পরবর্তী স্তরে পড়াশোনা করতে হবে ।
• আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে অবশ্যই OBC বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে ।
• পরিবারের বার্ষিক আয় এক লক্ষ টাকার বেশি হওয়া যাবে না ।
ওয়েসিস স্কলারশিপ এ কত টাকা পাওয়া যায়
ওয়েসিস স্কলারশিপ এ রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার দুজন মিলে এই স্কলারশিপের টাকাটা দেয় এক্ষেত্রে ৬০% অনুদান হলো রাজ্য এবং বাকি ৪০% অনুদান কেন্দ্রীয় সরকার প্রদান করে । তাই অনেক সময় স্কলারশিপের অর্থ পেতে একটু সময় লেগে যায় , ওয়েসিস স্কলারশিপে শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং বিষয়ের ভিত্তিতে স্কলারশিপের অর্থ প্রদান করা হয় কোন শ্রেণীর জন্য কত টাকা প্রদান করা হয় নিম্নে দেওয়া হল ।
SC বিভাগের ডে স্কলারদের জন্য
১. প্রিম্যাটট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে -
বার্ষিক ৩৫০০ টাকা
২. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে
বার্ষিক ৭০০০ টাকা (সর্বাধিক)
৩. মেডিকেল /ইঞ্জিনিয়ারিং/এমফিল/পিএইচডি/এল এল এম শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ৭০০০ টাকা
৪. বি ফার্ম / এল এল বি / বি নার্সিং /পিজি ইত্যাদি কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রত্যেক বছর ৬৫০০ টাকা ।
৫. স্নাতক তো আর পর্যন্ত জেনারেল কোর্সের জন্য বার্ষিক ৩০০০ টাকা ।
৬. একাদশ এবং দ্বাদশ /আইটিআই/পলিটেকনিক ইত্যাদি কোর্সের জন্য বার্ষিক ২৫০০ টাকা ।
SC বিভাগের হোস্টেলারদের জন্য কত টাকা দেওয়া হয়
১. প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক ১০,০০০ টাকা ।
২. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ দের ক্ষেত্রে বার্ষিক ১৩,৫০০ টাকা ।
৩. স্নাতক স্তর জেনারেল কোর্সের জন্য বার্ষিক ১২০০০ টাকা ।
৪. একাদশ দ্বাদশ পলিটেকনিক আইটিআই ইত্যাদি কোর্সের জন্য বার্ষিক ১২০০০ টাকা ।
ST বিভাগের ডে স্কলারদের জন্য কত টাকা দেওয়া হয়
১. প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক ২,২৫০ টাকা ।
২. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বাধিক ৬,৬০০ টাকা ।
৩. স্নাতক স্তর পর্যন্ত জেনারেল কোর্সের জন্য বার্ষিক সর্বাধিক ৩,৬০০ টাকা
৪. একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি এবং আইটিআই পলিটেকনিক ইত্যাদি কোর্সের জন্য বার্ষিক ২,৭৬০ টাকা ।
ST বিভাগের হোস্টেলারদের জন্য কত টাকা দেওয়া হয়
১. প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বাধিক ১০,০০০ টাকা ।
২. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক ১৪,৪০০ টাকা ।
৩. স্নাতক স্তর পর্যন্ত জেনারেল কোর্সের জন্য ১২,০০০ টাকা ।
৪. একাদশ দ্বাদশ শ্রেণী এবং আইটিআই পলিটেকনিক ইত্যাদি কোর্সের জন্য বার্ষিক সর্বাধিক ১২,০০০ টাকা ।
OBC বিভাগের ডে এবং হোস্টেলার দের জন্য কত টাকা দেওয়া হয়
১. প্রিম্যাটট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক ৪,০০০ টাকা ।
২. পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে বার্ষিক ১০,০০০ টাকা।
৩. স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সাধারণ কোর্সের জন্য বার্ষিক ৬,০০০ টাকা ।
৪. একাদশ দ্বাদশ শ্রেণী এবং আইটিআই পলিটেকনিক্ ইত্যাদি কোর্সের জন্য বার্ষিক ৫,০০০ টাকা ।
ওয়েসিস স্কলারশিপ করতে কি কি লাগে
ওয়েসিস স্কলারশিপ জন্য যে সমস্ত নিম্নলিখিত কাগজপত্রের প্রয়োজন সেগুলি নিম্নে দেওয়া হল এগুলো অবশ্যই আপনাদের কাছে থাকতে হবে এবং এগুলোর ফটোকপি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমা করতে হবে এবং অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন করার সময় এগুলো প্রয়োজন ।
• বর্তমান আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির রশিদ।
• কাস্ট সার্টিফিকেট
• মাধ্যমিক এডমিট কার্ড (পোস্ট ম্যাট্রিকের ক্ষেত্রে এটি লাগবে)
• উচ্চ মাধ্যমিক মার্কশীট ( স্নাতক স্তরের ক্ষেত্রে এটি লাগবে)
• পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফাইনাল মার্কশিট ।
• ইনকাম সার্টিফিকেট ।
• ব্যাংকের পাস বই ।
• পাসপোর্ট সাইজ ফটো ।
ওয়েসিস স্কলারশিপ আবেদন
ওয়েসিস স্কলারশিপ অনলাইন এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে আবেদন করার পর একটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে বলবে সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে স্বাক্ষর করার পর , উপরে যে সমস্ত নথিগুলো বলা হলো সেগুলি সমেত নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা BDO অফিস অথবা DWO এর অফিসে জমা করতে হবে ।
অনলাইন আবেদনের জন্য সম্পূর্ণ পদ্ধতি দেখুন
• সর্বপ্রথম আপনাকে ওয়েসিস স্কলারশিপ এর অফিসের পোর্টালে যেতে হবে - oasis.gov.in
• হোমপেজে আসার পর Students Corner থেকে Students Registration এ ক্লিক করতে হবে ।
• পরবর্তী পেজে আপনি যে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন সেই জেলাটি সিলেক্ট করুন ।
• এরপর আপনি একটি মেসেজ দেখতে পারবেন তার নিচে 'আমি সহমত' বলে লেখা থাকবে সেটিতে ক্লিক করবেন ।
• এবারে নতুন একটি পেজ খুলে যাবে সেই পেজে আপনার কাস্ট সার্টিফিকেটের নাম্বার লেখার পর ভেরিফাই করতে হবে , আপনার নাম জন্ম তারিখ আমার নম্বর এগুলো সব সেখানে লিখতে হবে , আপনার ব্যাংকে একাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ডের লিংক করানো আছে সেটি চেকবক্সে ক্লিক করতে হবে , এরপর ক্যাপচা কোড লিখে Proceed এ ক্লিক করতে হবে ।
• এরপরের পেজটিতে Primary Details Of Student এখানে অভিভাবকের নাম আপনি কোন কাস্টের সে কাজটি উল্লেখ করতে হবে আপনি যে করছে এখন পড়াশোনা করছেন সেই পোস্টটি সেখানে লিখতে হবে পারিবারিক বার্ষিক আয় কত সেটি লিখতে হবে নিজের আধার নাম্বার নিজের ব্লকের নাম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম মোবাইল নম্বর ইত্যাদি আরো কিছু তথ্য সেখানে দিতে হবে।
• এবারে Student Class Details এরমধ্যে পূর্ববর্তী আপনি কোন পরীক্ষায় পাশ করেছেন সেটি উল্লেখ করতে হবে এরপর সাবমিট করলে আপনার রেজিস্ট্রেশন কাজটি সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং আপনাকে একটি একনলেজমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড করতে বলবে। সেটিকে ডাউনলোড করে নেবেন অবশ্যই কারণ পরবর্তীতে যখন সামনের বছর রেনুয়াল করতে যাবেন তখন নম্বরটি দরকার হবে ।
• রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর এবার লগইন করতে হবে এবারে যে সমস্ত তথ্যগুলো যাচ্ছে সেগুলি আপনাদের সেখানে টাইপ করে দিতে হবে যেমন এখন আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কোন করছে পড়াশুনা করছেন সেটি নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস সমস্ত তথ্য দেওয়ার পর নিচে Save & Proceed এই অপশনে ক্লিক করতে হবে তারপরে ভেরিফাই এবং লক এপ্লিকেশন অপশনে ক্লিক করতে হবে তাহলে আপনার আবেদন পত্রটি সম্পূর্ণভাবে লক হয়ে যাবে এবং একবার লক হয়ে গেলে পরবর্তীতে তার কোন কিছু ফরম এর ভেতরে পরিবর্তন করতে পারবেন না এবারে ডাউনলোড এপ্লিকেশন ফর্ম বলে একটা অপশন পাবেন সেটাতে ক্লিক করে আপনার আবেদন পত্র ফরমটি ডাউনলোড করে নেবেন অবশ্যই এই ফর্মটি প্রিন্ট করবেন এবং তা কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সমিতি অথবা সরকারের অফিসার কে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে বর্তমানে আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা বিডিও অফিস , DWO এর অফিসে জমা করাতে হবে ।
ওয়েসিস স্কলারশিপের আরো কিছু তথ্য জানার জন্য অবশ্যই আপনি নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের Contact Us পেজের মাধ্যমে অথবা আমাদেরকে মেইল করতে পারেন ।